Prose Details
প্রথম আলো
সুজাতা বলল, 'খুব ভালো রেজাল্ট করেছিস'।
অরুণ বলল, 'তাই?'
'হ্যাঁ রে। আমি খুব খুশি হয়েছি। আমার রেজাল্ট তুলনামূলক ভালো না হলেও তোর রেজাল্ট দেখে আমি আমার দুঃখ একদম ভুলে গেছি। বিশ্বাস কর।'
দুরু দুরু বুকে অরুণ বলল, 'তোর এই হাসি আমার হৃদয়ের গভীরে যে কি সুখ বয়ে এনেছে আমি বলে বোঝাতে পারবো না'।
'আমাকে নিয়ে চল্ সেখানে, আমি প্রাণভরে দেখবো'।
'সত্যিই যেতে চাস?'
'হ্যাঁ সত্যি সত্যি সত্যি'।
'যদি বলি আমার সেখানে তোর নিত্য যাতায়াত। তুইতো আয়না। তোর মুখচ্ছবি এক পলক দেখে নিয়ে আমি আমার পড়াশুনো আরও ধারালো করি জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়ার স্বপ্নে'।
'যদি তাই হয় তাহলে তুই আমাকে গায়ে চাদরের মতো সবসময় জড়িয়ে রাখিস। তোর উষ্ণতা মেখে আমি স্বপ্নে বিভোর হয়ে থাকবো'।
অতীতের এই স্মৃতিকথাগুলো এখনও বারবার উঁকি দেয় অরুণের মনে। সুজাতার মনেও কি উঁকি দেয়? সে উত্তর কিভাবে আর পাবে অরুণ। ছ'বছর হয়ে গেল আর দেখা হয়নি।
কলেজে একসাথে ইংরেজি অনার্স পড়া। একই প্রফেসরের কাছে টিউশান পড়া। কোন নোট্ স বুঝতে না পারলে অরুণের কাছে ছুটে আসা। অরুণও সুজাতার এই পাগলামিগুলো মনেপ্রাণে গ্রহন করে নিত। তাদের আসা-যাওয়ার কথার মাঝে গল্পের মাঝে স্বপ্ন থাকতো সংগ্রাম থাকতো সংকল্প থাকতো কিন্তু কোন বিচ্ছেদ থাকতো না।
একদিন তো অরুণ বলেছিল, 'দেখ আমাদের গল্পে যেমন কোন বিচ্ছেদ নেই আমাদের জীবনেও যেন কোনদিন বিচ্ছেদ না আসে'।
হঠাৎ অরুণের এমন কথা শুনে সুজাতা কোন উত্তর দিতে পারে নি। শুধু অরুণকে কাছে টেনে তার বুকে মাথা রেখে বলেছিল, 'আমি অন্ধকার চাই নি। সবসময় আলোর নেশায় বুকের মধ্যে ঘুপটি মেরে বসে থাকি। তুই সেই আলো। আমার প্রথম আলো। তোর কথার রেশ আমার একলা হওয়া মাঝরাতে সূর্যোদয়ের ইশারা জাগিয়ে তোলে।'
এম এ পড়াকালিন অরুণ ভেবেছিল কমপ্লিট করার পর একটা চাকরি জুটিয়ে নেবে। তারপর সুজাতাকে পাকাপাকিভাবে কাছে রাখার জন্য তার বাড়িতে প্রস্তাব দেবে।
এদিকে কলেজ কমপ্লিট করার পর থেকেই সুজাতার জন্য ভালো ছেলের সম্বন্ধ আসতে থাকে। প্রথম প্রথম এটা ওটা কারণ দেখিয়ে দেখাশোনা পিছিয়ে দিত। কিন্তু সমস্যাকে সামনে থেকে ফেস না করলে একদিন তা মহীরুহ আকার ধারণ করে। বুকের মধ্যে একটু একটু করে সাহস জমাচ্ছিল বাড়িতে অরুণের কথাটা জানিয়ে দেওয়ার জন্য। অনেকবার চেষ্টা করেও পারেনি কেননা অরুণ তখনও কোন চাকরি পায়নি। চাকরির পাওয়ার জন্য একজনকে যথেষ্ট সময়ও দেওয়া দরকার কিন্তু বাড়ির বড়োরা কি সেকথা অন্তর দিয়ে বিবেচনা করবে? একবছর পিছিয়ে দেওয়ার পর কোন উপায় না পেয়ে একদিন বাড়িতে মায়ের কাছে অরুণের কথা বলল সুজাতা।
সুজাতার মায়ের কাছ থেকে তার বাবা শোনামাত্র তো রেগে আগুন, 'পড়াশোনা করতে পাঠিয়েছিলাম কি এই কথাগুলো শোনার জন্য? জীবন সম্পর্কে ওর কোন ধারণা আছে? একটা ভালো চাকরি না থাকলে সংসার কিভাবে চলবে সে লড়াই কি দেখেছে কখনও?'
দিনকয়েক মেয়ের মনমরা মুখ দেখে শান্ত হয়ে তার বাবা বললেন, 'আচ্ছা ঠিক আছে, ছ'মাস সময় দিলাম, এর মধ্যে ভালো চাকরি জোটাতে পারলে অরুণের কথা নিয়ে ভাববো। আর তা নাহলে তোকে অন্যত্র ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দেব। তার জন্য তোকে প্রস্তুত থাকতে হবে'।
এই কথা মেনে নেওয়া ছাড়া সুজাতার কাছে আর কোন পথ ছিল না। তবু তো কিছুদিন অন্তত সময় পাওয়া গেল। মনের মধ্যে সাজানো স্বপ্ন নিয়ে যেকেউ শেষ দেখে ছাড়তে চায়।
অরুণ এই কথা শুনে অখুশি হলেও অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। খুব চেষ্টা করল ছয় মাসের মধ্যে একটা চাকরি জুটিয়ে নেওয়ার।
দেখতে দেখতে ছয় মাস অতিক্রান্ত হল।
সুজাতার বাবার কলিগের ছেলে। একটা বড় এমএনসি তে চাকরি করে। ব্যাঙ্গালোরে থাকে। এক দেখাতেই মেয়ে পছন্দ। সুজাতার না করার আর কোন উপায় ছিল না। একটা শেষ চিঠি লিখেছিল অরুণকে।
তারপর ছয় বছর কেটে গেছে। সুজাতাও বাপের বাড়ি আসার সুযোগ পেত কম। বছরে একবার দুর্গাপূজার সময়। অরুণের সঙ্গে আর দেখাই হয়নি। ইতোমধ্যে অরুণ স্কলারশিপে পিএইচডি করার সুযোগ পেয়েছে। দীর্ঘ গবেষণার মাঝেমাঝে যখন ক্লান্ত লাগে সুজাতার পাঠানোর শেষ চিঠি অরুন মাঝেমাঝে খুলে দেখে। ঘ্রাণ নেয়। বুকের মধ্যে একটা শীতল স্রোত তাকে জাগিয়ে রাখে, তার একাকিত্বের অস্ফুট কথাগুলো ঢেউয়ের ওপর এমনভাবে ভাসিয়ে রাখে যেন নাচতে নাচতে সুজাতার নূপুর পায়ে গিয়ে চুম্বন করে।
পিএইচডি কমপ্লিট করার পর দুমাস হল অরুণ কলেজের অধ্যাপক হিসাবে নিযুক্ত হয়েছে। অরুনের মা মানে রমাদেবি হঠাৎ রুমে ঢুকে বলল, বাবা, সবাইকে বিয়ের কার্ড পাঠানো হয়ে গেছে? হঠাৎ যেন তার হুঁশ ফিরল। আর মাত্র চার দিন পর বিয়ে। অথচ আজ সুজাতার কথা মনে পড়ছে।
বিয়ের কার্ড পাঠানোর জন্য যাদের নামের লিস্ট ডাইরিতে লেখা ছিলো সেই নামগুলো মেলানোর জন্য বসে ছিল হঠাৎ ডায়েরি থেকে সেই চিঠিটা হাতে পড়তেই চিঠির লেষ লাইন ('বিয়ে হলেই হৃদয় ভাগ হয়ে যায় না...') এমনভাবে অরুণকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল সারা বিকেল কেটে গেল নামের লিস্ট আর মেলানো হলো না!...
© অক্ষয় কুমার সামন্ত
অরুণ বলল, 'তাই?'
'হ্যাঁ রে। আমি খুব খুশি হয়েছি। আমার রেজাল্ট তুলনামূলক ভালো না হলেও তোর রেজাল্ট দেখে আমি আমার দুঃখ একদম ভুলে গেছি। বিশ্বাস কর।'
দুরু দুরু বুকে অরুণ বলল, 'তোর এই হাসি আমার হৃদয়ের গভীরে যে কি সুখ বয়ে এনেছে আমি বলে বোঝাতে পারবো না'।
'আমাকে নিয়ে চল্ সেখানে, আমি প্রাণভরে দেখবো'।
'সত্যিই যেতে চাস?'
'হ্যাঁ সত্যি সত্যি সত্যি'।
'যদি বলি আমার সেখানে তোর নিত্য যাতায়াত। তুইতো আয়না। তোর মুখচ্ছবি এক পলক দেখে নিয়ে আমি আমার পড়াশুনো আরও ধারালো করি জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়ার স্বপ্নে'।
'যদি তাই হয় তাহলে তুই আমাকে গায়ে চাদরের মতো সবসময় জড়িয়ে রাখিস। তোর উষ্ণতা মেখে আমি স্বপ্নে বিভোর হয়ে থাকবো'।
অতীতের এই স্মৃতিকথাগুলো এখনও বারবার উঁকি দেয় অরুণের মনে। সুজাতার মনেও কি উঁকি দেয়? সে উত্তর কিভাবে আর পাবে অরুণ। ছ'বছর হয়ে গেল আর দেখা হয়নি।
কলেজে একসাথে ইংরেজি অনার্স পড়া। একই প্রফেসরের কাছে টিউশান পড়া। কোন নোট্ স বুঝতে না পারলে অরুণের কাছে ছুটে আসা। অরুণও সুজাতার এই পাগলামিগুলো মনেপ্রাণে গ্রহন করে নিত। তাদের আসা-যাওয়ার কথার মাঝে গল্পের মাঝে স্বপ্ন থাকতো সংগ্রাম থাকতো সংকল্প থাকতো কিন্তু কোন বিচ্ছেদ থাকতো না।
একদিন তো অরুণ বলেছিল, 'দেখ আমাদের গল্পে যেমন কোন বিচ্ছেদ নেই আমাদের জীবনেও যেন কোনদিন বিচ্ছেদ না আসে'।
হঠাৎ অরুণের এমন কথা শুনে সুজাতা কোন উত্তর দিতে পারে নি। শুধু অরুণকে কাছে টেনে তার বুকে মাথা রেখে বলেছিল, 'আমি অন্ধকার চাই নি। সবসময় আলোর নেশায় বুকের মধ্যে ঘুপটি মেরে বসে থাকি। তুই সেই আলো। আমার প্রথম আলো। তোর কথার রেশ আমার একলা হওয়া মাঝরাতে সূর্যোদয়ের ইশারা জাগিয়ে তোলে।'
এম এ পড়াকালিন অরুণ ভেবেছিল কমপ্লিট করার পর একটা চাকরি জুটিয়ে নেবে। তারপর সুজাতাকে পাকাপাকিভাবে কাছে রাখার জন্য তার বাড়িতে প্রস্তাব দেবে।
এদিকে কলেজ কমপ্লিট করার পর থেকেই সুজাতার জন্য ভালো ছেলের সম্বন্ধ আসতে থাকে। প্রথম প্রথম এটা ওটা কারণ দেখিয়ে দেখাশোনা পিছিয়ে দিত। কিন্তু সমস্যাকে সামনে থেকে ফেস না করলে একদিন তা মহীরুহ আকার ধারণ করে। বুকের মধ্যে একটু একটু করে সাহস জমাচ্ছিল বাড়িতে অরুণের কথাটা জানিয়ে দেওয়ার জন্য। অনেকবার চেষ্টা করেও পারেনি কেননা অরুণ তখনও কোন চাকরি পায়নি। চাকরির পাওয়ার জন্য একজনকে যথেষ্ট সময়ও দেওয়া দরকার কিন্তু বাড়ির বড়োরা কি সেকথা অন্তর দিয়ে বিবেচনা করবে? একবছর পিছিয়ে দেওয়ার পর কোন উপায় না পেয়ে একদিন বাড়িতে মায়ের কাছে অরুণের কথা বলল সুজাতা।
সুজাতার মায়ের কাছ থেকে তার বাবা শোনামাত্র তো রেগে আগুন, 'পড়াশোনা করতে পাঠিয়েছিলাম কি এই কথাগুলো শোনার জন্য? জীবন সম্পর্কে ওর কোন ধারণা আছে? একটা ভালো চাকরি না থাকলে সংসার কিভাবে চলবে সে লড়াই কি দেখেছে কখনও?'
দিনকয়েক মেয়ের মনমরা মুখ দেখে শান্ত হয়ে তার বাবা বললেন, 'আচ্ছা ঠিক আছে, ছ'মাস সময় দিলাম, এর মধ্যে ভালো চাকরি জোটাতে পারলে অরুণের কথা নিয়ে ভাববো। আর তা নাহলে তোকে অন্যত্র ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দেব। তার জন্য তোকে প্রস্তুত থাকতে হবে'।
এই কথা মেনে নেওয়া ছাড়া সুজাতার কাছে আর কোন পথ ছিল না। তবু তো কিছুদিন অন্তত সময় পাওয়া গেল। মনের মধ্যে সাজানো স্বপ্ন নিয়ে যেকেউ শেষ দেখে ছাড়তে চায়।
অরুণ এই কথা শুনে অখুশি হলেও অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। খুব চেষ্টা করল ছয় মাসের মধ্যে একটা চাকরি জুটিয়ে নেওয়ার।
দেখতে দেখতে ছয় মাস অতিক্রান্ত হল।
সুজাতার বাবার কলিগের ছেলে। একটা বড় এমএনসি তে চাকরি করে। ব্যাঙ্গালোরে থাকে। এক দেখাতেই মেয়ে পছন্দ। সুজাতার না করার আর কোন উপায় ছিল না। একটা শেষ চিঠি লিখেছিল অরুণকে।
তারপর ছয় বছর কেটে গেছে। সুজাতাও বাপের বাড়ি আসার সুযোগ পেত কম। বছরে একবার দুর্গাপূজার সময়। অরুণের সঙ্গে আর দেখাই হয়নি। ইতোমধ্যে অরুণ স্কলারশিপে পিএইচডি করার সুযোগ পেয়েছে। দীর্ঘ গবেষণার মাঝেমাঝে যখন ক্লান্ত লাগে সুজাতার পাঠানোর শেষ চিঠি অরুন মাঝেমাঝে খুলে দেখে। ঘ্রাণ নেয়। বুকের মধ্যে একটা শীতল স্রোত তাকে জাগিয়ে রাখে, তার একাকিত্বের অস্ফুট কথাগুলো ঢেউয়ের ওপর এমনভাবে ভাসিয়ে রাখে যেন নাচতে নাচতে সুজাতার নূপুর পায়ে গিয়ে চুম্বন করে।
পিএইচডি কমপ্লিট করার পর দুমাস হল অরুণ কলেজের অধ্যাপক হিসাবে নিযুক্ত হয়েছে। অরুনের মা মানে রমাদেবি হঠাৎ রুমে ঢুকে বলল, বাবা, সবাইকে বিয়ের কার্ড পাঠানো হয়ে গেছে? হঠাৎ যেন তার হুঁশ ফিরল। আর মাত্র চার দিন পর বিয়ে। অথচ আজ সুজাতার কথা মনে পড়ছে।
বিয়ের কার্ড পাঠানোর জন্য যাদের নামের লিস্ট ডাইরিতে লেখা ছিলো সেই নামগুলো মেলানোর জন্য বসে ছিল হঠাৎ ডায়েরি থেকে সেই চিঠিটা হাতে পড়তেই চিঠির লেষ লাইন ('বিয়ে হলেই হৃদয় ভাগ হয়ে যায় না...') এমনভাবে অরুণকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল সারা বিকেল কেটে গেল নামের লিস্ট আর মেলানো হলো না!...
© অক্ষয় কুমার সামন্ত
0 comments
Add your comment here
Use the following form to leave your comment on this prose
Statistics
Number of VISITORS | 28069 |
Number of REGISTERED USERS | 4956 |
Number of Writers | 2121 |
Total Number of Poems | 3 |
Total Number of Prose | 17 |
Search
Writers’ list
" সুদীপ্ত মণ্ডল (SUDIPTA MONDAL) "
স্বরূপ মুখার্জ্জী (Swarup Mukherjee)
Bhaswati Banerjee Roychowdhury
Dr. Pinki Purkayastha Chandrani
Dr. Satyadarshi Roy, A Homoeopathy Consultant
KOUSHIKA CHAKRABORTY MUKHERJEE
Paromita Raha Halder ( Bijoya)
Paromita Raha Halder ( Bijoya)
Prithwish Datta (পৃথ্বীশ দত্ত)
Romi Roy Chowdhury Chakraborty
SHARADINDU CHAKRABORTY শরদিন্দু চক্রবর্তী
Sonali Bhattacharyya Mukherjee
subarnarekha dhar (chatterjee)
Subhasree Bhattacharjee (শুভশ্রী ভট্টাচার্য্য)
SUMANTA BHOWMICK - সুমন্ত ভৌমিক
প্রসেনজীত কর মালাকার (রাতের আঁধার)
শাহীনূর মুস্তাফিজ(বিপ্লবী কবি)