Prose Details
সুকন্যা (মাসের সেরা) শৈলেন হাজরা
সুকন্যা (মাসের সেরা)
শৈলেন হাজরা
"সুকু,এই সুকু, নিচে এসো, কি দেখবে এসো"
17+ এর মেয়ে সুকু,মানে 'সুকণ্যা সৈনিক'।সবে সবে H.S পাশ করেছে।Bio science এর Biology তার febret subject.পরবর্তীকালে ওটা নইয়েই পড়ার ইচ্ছে আছে সুকুর।স্কুল,বাড়ি,টিউশান আর মামার বাড়ি ছাড়া আর যেকোন জায়গার অস্তিত্ত্ব সে কেবল T.V আর ভূগোলের মানচিত্রেই দেখেছে সে।সেগুলো দিয়ে কত রং তুলির মহাবিশ্ব গড়া আছে তার মনের ভেতর।কৈশরের বাঁধন ছিঁড়ে যৌবনের শেকলে বাঁধা হতে যাওয়া সুকুর এখোনো শৈশবের পুতুল খেলা বর বৌয়ের বাসর রাত কাটেনি।
আজ H.S এর result out.মনে মনে ভীষন ভয় আর উত্তেজনা মেশানো সরবতের অনুভুতি।কি হবে-কি হবে,"শুধু পাশ করব-first devition-second devition-নাকি আরেকটু ভালো star marks,উফ্ আর ভাবতে পারছিনা"
খোলা ছাদে একা একা,সাধ করে লাগানো গোলাপ গাছটার কাছে কত জমানো feelings আর আবেদন,প্রশ্ন।
নিচে মা ডাকছে,টিভিতে রেজাল্ট দেখাচ্ছে।টিভিতে দেখানোর মত রেজাল্ট যে কখোনোই তার হবে না সেটা সুকু ভালোকরেই জানে।মাধ্যমিকের রেজাল্টও কিছু আহামরি নয়।Star marks এর থেকে মাত্র সাত নাম্বার কম।শহরতলির গলির মোড়ের সামান্য এক শাড়ি দোকানির মেয়ে সুকি।তাতে তার বিন্দুমাত্র আফসোস নেই,শুধু বাবার বুকটা গর্বে ফুলিয়ে তোলার মত রেজাল্ট সে করতে পারেনি তা নিয়ে নিজের ওপর আক্ষেপ ছিল খুব।মাধ্যমিকের রেজাল্ট খারাপ তাই pure science পায়নি সুকু।কষ্ট হলেও বাবা চেয়েছিল pure science দিতে,না পাওয়ায় অগত্যা Bio.এতেও খুশি সুকু,ভেবেছিল এটা নিয়েই নাহয় পরের বার ভালো করবে সে।
বাজার ঘাটে চারিদিকে মোবাইল আর ইন্টারনেটের রমরমা হলেও সুকুর বাড়িতে কেবল একটা সাদআ কালো নোকিয়ার keypad ছাড়া আর কোন অত্যাধুনিক যোগাযোগ মাধ্যমের বালাই নেই।তাই net এ রেজাল্ট দেখারও কোন বেপার নেই।
"তোমার বাবা দোকান থেকে এলেই বেরোবে একসঙ্গে রেকাল্ট আনতে, নাও তাড়াতাড়ি ready হও" বলে সুকুর মা T.V টা বন্ধ করে রান্নআ ঘরের দিকে চলে গেল।বাবার সঙ্গে সাইকেলে যেতে যেতে হটাৎ রাস্তার মাঝে সাইকেল থামিয়ে পাশের দোকানের এক কর্মচারি বলল-- "রবিদা এবার তোমাদের সুকুতো দারুন রেজাল্ট করেছে,মিষ্টি টিষ্টি খাওয়াও"।বাবা একগাল হাঁসিতে বলে উঠল-"তোরা কোথা থেকে দেখলি?"
"আমরা নেটে সার্চ করেছি ওর এডমিট্ দিয়ে" বলল ঐ কর্মচারি।বাবা বলল-- " ঠিক আছে ঠিক আছে ওসব পরে হবে আগেতো রেজাল্টটা হাতে আসতে দে"।
82% marks, খুব hi fi না হলেও নিজেকে bit করে বাবাকে খুশি করার মতো কাজ সে করতে পেরেছে।college counciling এ Zuology hons পেয়েছে কাছাকাছির একটা ভালো কলেজে।
শহরতলির গ্রাম্য এলাকা আজো মেয়েদের উচ্চ শিক্ষা বাধাপ্রাপ্ত হয়।ইতিমধ্যে বাবার কাছে অনেক বিয়ের সম্বন্ধও এসেছে সুকুর জন্য।প্রতিবেশিরা গল্প করার আছিলায় বাড়িতে এসে বলত--"মেয়েদের ওত পড়িয়ে কি হবে,বিয়ে দাও সংসার করুক জীবন বর্তে যাবে"।সুকুর মায়ের কোন বিষয়েই তেমন কোন আগ্রহ নেই কিন্তু ওর বাবার কানে এসব উঠলে বাবা খুব চটে যায়।যখন সুকু প্রথম পৃথিবীর আলো দেকে তখন বাবা ভীষন খুশি।তার পর থেকেই তিনজনের এই লতানো সংসার সুকুকে অবলম্বন করে এগিয়ে চলেছে।বাবা সাধ করে নাম রাখে 'সুকণ্যা'।বাবার ভালো মেয়ে হবে সুকু।
কলেজের প্রথম দিন।স্কুলের মত এবারও বাবার সাইকেলে চড়েই কলেজে যাবে সুকু। এদিকে বাবাকে সকাল থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।"মা বাবাকে কোথাও দেখেছো,আজ আমার কলেজের প্রথম দিন ,বাবা আমার সঙ্গে যাবে।উফ্ বাবাযে কি করেনা"--সুকুর exitement টা চরমে।কত কি ঘোরপাক খাচ্ছে মনের ভেতর।school উএর teacher বন্ধু বান্ধব এদের সবার কাছ থেকে কলেজের কত ধারনার উপকরন পেয়েছে সুকু , কত উচ্ছৃশ্খলতার ঘটনাও ছিল।
আজকাল একটু যেন বদল ঘটেছে সুকুর।শরীর মন সব যেন ফাগুনের হাওয়ায় ভেষে আসা সুগন্ধি ফুলের সুভাষের মত চিত্তাকর্ষক হয়ে উঠেছে।আজকাল যেন নিজেকে নিয়ে একটু বেশিই ব্যাস্ত থাকে ও। যৌবনের তিলোত্তমা রুপে ফুটে ওঠার কাজ হয়তো শুরু হয়ে গেছে ওর।কিছু কিছু চোখের চাউনি যেন আজকাল ওর মনে শ্রীহরন জাগায়।লম্বা বাদামি চুলের আড়ালে যে মুখটা তামাটে শ্যামবর্নের,তার ঠোটের কোনে যেন কোন অজানা গোপন হাঁসি দিনের আলোর আড়ালে বিকেলের অপেক্ষা করে।বিকেলটা তার একান্তই নিযস্ব।পুতুল বিয়ে ছেড়ে রুপসজ্জায় মনোযোগী সুকু এখন পরিপূর্ণা 'সুকন্যা'।
স্নানের ঘরের ভেতর থেকে শুনতে পাচ্ছে সুকু বাবার উত্তেজিত কন্ঠস্বর----"সুকু এই সুকু বেরিয়ে আয় বেরিয়ে আয় তাড়াতাড়ি"।
চটপট স্নান সেরে আগে থেকে বাছাই করা একটা off white এর আনারকলিতে সেজে বেরিয়ে আসে সে।
"দেখ দেখ কি এনেছি তোর জন্য"আবাবার হাতে একটা screen touch android.মনের গভির থেকে বেরিয়ে আসা একমুখ হাঁসি।কতবার মনে মনে কামনা করেছে সে এই জিনিসটার জন্য কিন্তু কখোন বাবার সামনে বলতে পারেনি।মেঘ না চাইতে বৃষ্টির মতো আনন্দের বন্যা বইছে এখন সুকুর মনে।
"দেখ সুকু smart phone নিলেই smart হওয়া যায় না,আর আসল smart ব্যাক্তিত্তের জন্য smart phone এর কোন ভূমিকা নেই"।বাবার কথাগুলো মন দিয়ে শুনলেও সব মাথার ওপর দিয়ে বেরিয়ে গেল তার।
কলেজের প্রথম দিন বেশ কেটেছে সুকুর।চারিদিকে লোকজনের ভিড়ে সব খারাপ কিছু আড়াল হয়ে গেছে।
বাড়ি থেকে কলেজের distance টা স্কুলের থেকে বেশি।তাই বাবা সুকুকে কলেজ ছেড়ে দোকান খুলতে দেরি হয় ।তাছাড়াও সুকু এখন বড় হয়েছে নতুন নতুন কত বন্ধু বান্ধব হয়েছে ওর।ওর বন্ধুমহলে এই ব্যেপারটা যে ভালো যায়গা পায়নি তা সে এখন বুঝতে পারে।তাই এখন বাসেই যাতায়াত করে সুকু।এর আগে এত খোলামেলা পরিবেশ সে কখোন পায়নি,যদিও এটা নিয়ে তার কোন অভিযোগ নেই।অল্পে খুশি হতে শিখেছে সে বাবার কাছ থেকে।
একা একা রাস্তায় বেরোতে একটু ভয়ও লাগে আবার মজাও লাগে তার। নিযস্বতার আবেগলাগানো স্বাধীনতার প্রতাকা উড়িয়ে যাওয়া সুকু আজ জীবনের কাছে খুব great fool.
সামনেই কলেজের নবীন বরন,ওকে perform করতে হবে অনুষ্ঠানে।গ্রীষ্মের শেষ বর্ষার শুরুরতে আজ একটু মেজমেজে weather.সকাল থেকে মেঘ করে আছে,দু-একবার রাস্তা ভেজানো বৃষ্টিও হয়েছে।
কলেজ বেরোবে সুকু।
বাবা মা এবার first time আমি কলেজে perform করছি,তোমরা না এলে কিন্তু আমি স্টেজেই উঠব না" সুকু খেতে খেতে বলল বাবা মাকে। বাবা মুচকি হেঁসে বলল -- "আমিতো যাবই সুকু ,তোর মা কে জিগ্গেস কর দেখ তোর মায়ের গৃহকোন তোর কলেজ পর্যন্ত পৌছোবে কিনা" বলেই বাবা আর মেয়ে হাঁসতে শুরু করল।
রিহারসেল চলছে ফাইনাল স্টেজ রিহারসেল করছে সুকু।এরই মধ্যে দু চারটে চোখ যেন তার অস্বস্তি জাগাচ্ছে মাঝে মাঝে।এই সব কিছু এড়িয়ে সে পারফর্ম করছে একটা রবীন্দ্র নৃত্ত। নাচটা সে profetional দের কাছ থেকে শেকেনি , যতটা শিকেছে সবই মায়ের কাছ থেকে।রিহারসেল শেষ করতে করতে প্রায় ছ-টা । বাইরে অল্প অল্প বৃষ্টি পড়ছে।
"ইস্ কত দেরি হয়ে গেল,এবার যাব কি করে,বাবাকে তো বলে দিলাম বন্ধুদের সঙ্গে যাব কিন্তু ওরা তো সব উলটো দিকে যাবে । যাই হোক চলে যাইতো বাসে উঠে তাড়াতাড়ি বাড়ি পৌছে যাব" মনে মনে নিযেই বিড় বিড় করতে করতে কলেজের গেট থেকে বেরিয়ে হাঁটতে শুরু করেছে সুকু।কলেজ থেকে বাসস্টেন্ড প্রায় পাঁচ মিনিটের হাঁটা পথ।থমথমে আবোহাওয়া আর একঘেঁঙে বৃষ্টিতে প্রকৃতি যেন মুখ ভার করে আছে।সন্ধের পর রাস্তাটা একেবারে ফাঁকা হয়ে যায় ,গা ছম্ ছম্ করছে সুকুর।দু-মিনিটের হাঁটা পথ পেরোতে না পেরোতেই সুকুর বাম কাঁধে যেন ঠান্ডা হাতের স্পর্শ । চিৎকার করে লাফিয়ে উঠল সুকু।পেছন ঘুরে চারটে অজানা লোককে দেখে চমকে যায় সুকু। চারজনেরই লোলুপ দৃষ্টি ওর ওপর।ভয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে তার।চার জনের একজন বলল -- "সুন্দরি অনেকতো নাচানাচি হল,এবার আমাদের সঙ্গেও এবার এস একটু নাচিয়ে দেখি" চারজনের অট্টহাঁসি দানব দৃষ্টিতে এগিয়ে আসছে ওর দিকে। সুকু পালাবার চেষ্টা করতেই ওরা দৌড়ে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে তুলে নিয়ে চলল কলেজের পেছন দিকে পরিতক্ত কলেজ বিল্ডিংএর দিকে।হাত পা ছুঁড়ে ,অাঁচড়ে- কামড়ে ,চুলেরমুঠি ছিঁড়ে বাঁচার চেষ্টা করছে সুকু।শয়তানের কঠোর আঘাতে আজ কোন ধ্বংষের পথে এগিয়ে চলেছে এই কলেজে পড়া মেয়েটা।জানোয়ারগুলো ওকে নইয়ে গিয়ে ফেলল পুরোনো বিল্ডিংএর একটা ফাঁকা ঘরে।সুকু তখনও হাত জোড় করে পায়ে ধরে কত অনুরোধ কাকুতি মিনত করছে।শয়তানের চোরাবালিতে এসে পড়েছে সে ,বাঁচার আর কোন আশা নেই।গ্রহন লেগেছে গ্রহন রাতের অন্ধকারের প্রতিটি মুহুর্ত এই গ্রহনকে গাঢ় থেকে আরো গাঢ় করছে। চারটে নরপশুর অকথ্য অত্যাচারে তিলে তিলে শেষ হল সুকন্যা।থর্ থর্ করে কাঁপতে থাকা উলঙ্গ দেহটা আস্তে আস্তে মূর্ছে নিশ্চুপ হয়ে গেল।
ওদিকে সারাত মেয়ে বাড়িতে না ফেরায় সুকুর বাবা মা চিন্তায় উৎকন্ঠায় অস্থির হয়ে কান্নাকাটি শুরু করেছে।সকাল হতেই পুলিশ নিয়ে চিরুনি তল্লাশি করে উদ্ধার করে আধমরা ,বিদ্ধস্ত ,রক্তাক্ত দেহটা যার নাম সুকণ্যা।একদিন পরে যে মেয়েটার বাবা মা কে সামনে বসিয়ে রবীন্দ্র নৃত্ত পরিবেশন করার কথা সে এখন হাসপাতালে -পরিচয় ধর্ষিতা।কত লাইটের ফ্ল্যাস্,ক্যামেরা,রিপোর্টার,কত প্রশ্ন একটারও উত্তর দেওয়ার মত অবস্থায় আজ আর নেই এই 17+ এর কলেজে পড়া মেয়েটার।মা বিছানা নিয়েছে ।বাবার আদরের মেয়েটা আজ ধর্ষিতা।জীবনের এই কঠিন বরন কি ভীষন যন্ত্রনায় perform করছে মেয়েটা।জীবনের এই চরম পরিনতিতে শয়তানরা হয়তো জলসা করছে।
আজ সুকু হাসপাতাল থেকে বাড়ি যাবে।এখন সুকুর মাও আগের থেকে সুস্থ।বাড়ির রাস্তায় যে কখোন বাবার সাইকেল ছাড়া আর কোন গাড়ি কল্পনা করতে পারেনি আজ সে অ্যাম্বুল্যেন্সে।সাইরেন শুনে পাড়ার আশেপাশের লোকেরা জড় হয় গাড়ির চারপাশে।কতটা সান্তনা আর সহানুভুতি ছিল জানি না তবে ধ্বংষের কফিনের শেষ পেরেকটা হয়তো তাদেরই ছিল।
"ধিঙ্গি মেয়ে চারিদিকে এলো হয়ে ঘুরে বেড়ালে তো শেয়াল কুকুরে ছিঁড়ে খাবেই" বাড়ির দরজার সামনে একগাদা ভিড়ের মধ্য থেকে উঠে আসা এই কটুক্তিগুলো সুকুর বাবার বুক চিরে ফাল্ ফাল্ করে দেয়।সুকু নির্বাক সেই দিনের পর থেকে একটাও কথা বলেনি সে।কেবল তাকিয়ে দেখে গেছে তার চরম পরিনতি।যৌবনের তিলোত্তমা সুকন্যা আজ তার একটাই পরিচয় 'ধর্ষিতা'।কত বিখ্যাত এখন সে, টভি,খবরের কাগজ,সোস্যাল মিডিয়া সব জায়গায় সে এখন top rank এ।কত লোক প্রতিদিন কত কত সহানুভুতির বার্তা আনে, কার্ড পাঠায়,ফুল দেয়,ম্যেগাজিনের ইন্টারভিউ এর জন্য আসে।
"জীবনের এই চরম পরিনতিতে কত বিখ্যাত এখন সে 'সুকন্যা সৈনিক' নামপাল্টে এখন 'ধর্ষিতা সুকন্যা' তাকে এত যশ এনে দিয়েছে" মনে মনে ভাবে সুকু। চারিদিকে পুলিশ তল্যাসি করেও ধর্ষকদের টিকিটিও উদ্ধার হয়নি কিন্তু সুকুর প্রতিদিনের কর্মকান্ড সবার নখদর্পনে কি অদ্ভুদ সমাজ আমাদের।
প্রতিদিনের নরকযন্ত্রনায় বাইরের খতটা যতখানি ভালো হয়েছে ,তার থেকে হাজার গুন গভীর হয়েছে ভেতরের যন্ত্রনআ।সুকুর বাবা এখন বাড়িতেই থাকে। সারাদিন বিভিন্ন কথায়, গল্পে আর ঐ ছাদের গোলাপ গাছটা দিয়ে ভোলাবার চেষ্টা করে।গোলাপ গাছটায় পাতা গজইয়েছে দু একটা , একটা কুঁড়িও ফুটেছে ডালে।ফুলটা পর পর আকারে বড় আরো বড় সুন্দর পরিপূর্না তারপর শেষ।একটার পর একটা পাঁপড়ি খসতে খসতে শুধু পড়ে রইল মাঝের দন্ডটা। সেটাও একদিন সুকিয়ে ঝরে নিঃশেষ।
খাটের ওপর রাখা লাল সাদা ঢাকাইটা মা বের করেছে আলমারি থেকে।হ্যাঁ এটাইতো পরার কথা ছিল সেদিন।কত লম্বা শাড়িটা। যে রাতটা সুকুর সর্বনাশ দেখেছে শাড়ির দৈর্ঘ্যটা ঐ রাতের গভীরতা মুছে ফেলবে আজ।কত নীবিড় সপ্ন ছিল তার চোখে সব আজ শেষ করে দিলে কেমন হয়।বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে ভাবছে সুকু।সবকিছু ভাবতে ভাবতে চোখের পাতাটা আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে সব আলো নিভে গেল।
লোকজন ,কান্নাকটি,ভিড় সব চলল কয়েকদিন।
"মা গো আমি এখানেই আছি" বলএ উঠল সে।এখন সে মুক্ত,জীবনের সব বিতর্ক তাকে আর ছুতে পারে না।এখন সে মা বাবার খেয়াল রাখে, নাচ practis করে বাবা মায়ের বাধ্য মেয়ে।তার মুক্ত আকাশটা আজ অন্ধকারের কালো রাতকে ছাপিয়ে উঠেছে।তারপর একদিন হটাৎ করে শরীর খারাপ।বাবা আইনি কাজে বাড়ির বাইরে ,আসতে তখনও অনেক বাকি।বিছানা ছেড়ে উঠতে পারছেনা সুকুর মা।সন্ধ্যেবেলা নিজেই বেরিয়ে পড়ল সুকু ওষুধ কেনার জন্য।বর্ষাকাল, সন্ধ্যের আকাশের কালো মেঘ আর বজ্র বিদ্যুৎের ঝলকে প্রকৃতি যেন নরকশয্যায় সজ্জিত হয়েছে।বাড়ি থেকে গলির মোড় দশ মিনিটের হাঁটা পথ।হেঁটেই যাচ্ছে সুকু।অনেকদিন পর বাড়ি থেকে বেরিয়েছে সে।চার পাঁচ মিনিট যাওয়ার পর সেই চার নরপশু ঝাঁপিয়ে পড়ে ওকে তুলে নিয়ে গেল পাশের একটা পোড় বাড়িতে।আগের বারের মত এবার সুকু আর ভয়ে চিৎকার করল না।ধ্বংষের তান্ডবের পুনরাবৃত্তির সুচনা দেখছে সে।ওরা হিংস্র পায়ে এগিয়ে আসতে সুকু শুধু একটাই কথা বলল -"তোরাকি জানতে পারিসনি আমার suicide এর খবরটা"।
হ্যাঁ সুকু ওরফে সুকন্যা আজ আর বেঁচে নেই।সেদিন বিছানায় ভাবতে ভাবতে ঐ সাদা লাল ঢাকাই শাড়িটা দিয়েই গলায় দড়ি দিয়ে মারা যায় সুকন্যার দেহটা ।
তবুও থেকে গেছে সে এই ইহলোকে,কোন বিচার পাওয়ার আশায় নয় কারন তার ক্ষতির বিচার করার মত কেউ হয়ত পৃথিবীতেই নেই ।
এরকম কত লক্ষ লক্ষ সুকন্যা প্রতিদিন জন্মায় আর ধ্বংষ হয়।কেউ তাদের মনেও রাখে না।এদের স্মৃতিকটা ঐ পুলিশ ফাইল আর খবরের কাগজে বন্দি থেকে উই পোকার খাবার যোগায়।কেজানে ওটা তার জীবনের হার ছিল না জিত,তবে এই হার জিতের উর্দ্ধে উঠে প্রতিটি সুকন্যার হাহাকার হয়তো আমরা শুনতে পাই না।
তাই প্রতিটি সুকন্যা তোমাদের জন্য--- এ সমাজ -দেশ-পৃথিবী-ব্রহ্মান্ড সব ছাড়িয়ে এগিয়ে যাও ,দুরে আরো দুরে যেখানে তোমরা সত্যিকারের তিলোত্তমা সুকন্যা ।
-------------সমাপ্ত----------------
শৈলেন হাজরা
"সুকু,এই সুকু, নিচে এসো, কি দেখবে এসো"
17+ এর মেয়ে সুকু,মানে 'সুকণ্যা সৈনিক'।সবে সবে H.S পাশ করেছে।Bio science এর Biology তার febret subject.পরবর্তীকালে ওটা নইয়েই পড়ার ইচ্ছে আছে সুকুর।স্কুল,বাড়ি,টিউশান আর মামার বাড়ি ছাড়া আর যেকোন জায়গার অস্তিত্ত্ব সে কেবল T.V আর ভূগোলের মানচিত্রেই দেখেছে সে।সেগুলো দিয়ে কত রং তুলির মহাবিশ্ব গড়া আছে তার মনের ভেতর।কৈশরের বাঁধন ছিঁড়ে যৌবনের শেকলে বাঁধা হতে যাওয়া সুকুর এখোনো শৈশবের পুতুল খেলা বর বৌয়ের বাসর রাত কাটেনি।
আজ H.S এর result out.মনে মনে ভীষন ভয় আর উত্তেজনা মেশানো সরবতের অনুভুতি।কি হবে-কি হবে,"শুধু পাশ করব-first devition-second devition-নাকি আরেকটু ভালো star marks,উফ্ আর ভাবতে পারছিনা"
খোলা ছাদে একা একা,সাধ করে লাগানো গোলাপ গাছটার কাছে কত জমানো feelings আর আবেদন,প্রশ্ন।
নিচে মা ডাকছে,টিভিতে রেজাল্ট দেখাচ্ছে।টিভিতে দেখানোর মত রেজাল্ট যে কখোনোই তার হবে না সেটা সুকু ভালোকরেই জানে।মাধ্যমিকের রেজাল্টও কিছু আহামরি নয়।Star marks এর থেকে মাত্র সাত নাম্বার কম।শহরতলির গলির মোড়ের সামান্য এক শাড়ি দোকানির মেয়ে সুকি।তাতে তার বিন্দুমাত্র আফসোস নেই,শুধু বাবার বুকটা গর্বে ফুলিয়ে তোলার মত রেজাল্ট সে করতে পারেনি তা নিয়ে নিজের ওপর আক্ষেপ ছিল খুব।মাধ্যমিকের রেজাল্ট খারাপ তাই pure science পায়নি সুকু।কষ্ট হলেও বাবা চেয়েছিল pure science দিতে,না পাওয়ায় অগত্যা Bio.এতেও খুশি সুকু,ভেবেছিল এটা নিয়েই নাহয় পরের বার ভালো করবে সে।
বাজার ঘাটে চারিদিকে মোবাইল আর ইন্টারনেটের রমরমা হলেও সুকুর বাড়িতে কেবল একটা সাদআ কালো নোকিয়ার keypad ছাড়া আর কোন অত্যাধুনিক যোগাযোগ মাধ্যমের বালাই নেই।তাই net এ রেজাল্ট দেখারও কোন বেপার নেই।
"তোমার বাবা দোকান থেকে এলেই বেরোবে একসঙ্গে রেকাল্ট আনতে, নাও তাড়াতাড়ি ready হও" বলে সুকুর মা T.V টা বন্ধ করে রান্নআ ঘরের দিকে চলে গেল।বাবার সঙ্গে সাইকেলে যেতে যেতে হটাৎ রাস্তার মাঝে সাইকেল থামিয়ে পাশের দোকানের এক কর্মচারি বলল-- "রবিদা এবার তোমাদের সুকুতো দারুন রেজাল্ট করেছে,মিষ্টি টিষ্টি খাওয়াও"।বাবা একগাল হাঁসিতে বলে উঠল-"তোরা কোথা থেকে দেখলি?"
"আমরা নেটে সার্চ করেছি ওর এডমিট্ দিয়ে" বলল ঐ কর্মচারি।বাবা বলল-- " ঠিক আছে ঠিক আছে ওসব পরে হবে আগেতো রেজাল্টটা হাতে আসতে দে"।
82% marks, খুব hi fi না হলেও নিজেকে bit করে বাবাকে খুশি করার মতো কাজ সে করতে পেরেছে।college counciling এ Zuology hons পেয়েছে কাছাকাছির একটা ভালো কলেজে।
শহরতলির গ্রাম্য এলাকা আজো মেয়েদের উচ্চ শিক্ষা বাধাপ্রাপ্ত হয়।ইতিমধ্যে বাবার কাছে অনেক বিয়ের সম্বন্ধও এসেছে সুকুর জন্য।প্রতিবেশিরা গল্প করার আছিলায় বাড়িতে এসে বলত--"মেয়েদের ওত পড়িয়ে কি হবে,বিয়ে দাও সংসার করুক জীবন বর্তে যাবে"।সুকুর মায়ের কোন বিষয়েই তেমন কোন আগ্রহ নেই কিন্তু ওর বাবার কানে এসব উঠলে বাবা খুব চটে যায়।যখন সুকু প্রথম পৃথিবীর আলো দেকে তখন বাবা ভীষন খুশি।তার পর থেকেই তিনজনের এই লতানো সংসার সুকুকে অবলম্বন করে এগিয়ে চলেছে।বাবা সাধ করে নাম রাখে 'সুকণ্যা'।বাবার ভালো মেয়ে হবে সুকু।
কলেজের প্রথম দিন।স্কুলের মত এবারও বাবার সাইকেলে চড়েই কলেজে যাবে সুকু। এদিকে বাবাকে সকাল থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।"মা বাবাকে কোথাও দেখেছো,আজ আমার কলেজের প্রথম দিন ,বাবা আমার সঙ্গে যাবে।উফ্ বাবাযে কি করেনা"--সুকুর exitement টা চরমে।কত কি ঘোরপাক খাচ্ছে মনের ভেতর।school উএর teacher বন্ধু বান্ধব এদের সবার কাছ থেকে কলেজের কত ধারনার উপকরন পেয়েছে সুকু , কত উচ্ছৃশ্খলতার ঘটনাও ছিল।
আজকাল একটু যেন বদল ঘটেছে সুকুর।শরীর মন সব যেন ফাগুনের হাওয়ায় ভেষে আসা সুগন্ধি ফুলের সুভাষের মত চিত্তাকর্ষক হয়ে উঠেছে।আজকাল যেন নিজেকে নিয়ে একটু বেশিই ব্যাস্ত থাকে ও। যৌবনের তিলোত্তমা রুপে ফুটে ওঠার কাজ হয়তো শুরু হয়ে গেছে ওর।কিছু কিছু চোখের চাউনি যেন আজকাল ওর মনে শ্রীহরন জাগায়।লম্বা বাদামি চুলের আড়ালে যে মুখটা তামাটে শ্যামবর্নের,তার ঠোটের কোনে যেন কোন অজানা গোপন হাঁসি দিনের আলোর আড়ালে বিকেলের অপেক্ষা করে।বিকেলটা তার একান্তই নিযস্ব।পুতুল বিয়ে ছেড়ে রুপসজ্জায় মনোযোগী সুকু এখন পরিপূর্ণা 'সুকন্যা'।
স্নানের ঘরের ভেতর থেকে শুনতে পাচ্ছে সুকু বাবার উত্তেজিত কন্ঠস্বর----"সুকু এই সুকু বেরিয়ে আয় বেরিয়ে আয় তাড়াতাড়ি"।
চটপট স্নান সেরে আগে থেকে বাছাই করা একটা off white এর আনারকলিতে সেজে বেরিয়ে আসে সে।
"দেখ দেখ কি এনেছি তোর জন্য"আবাবার হাতে একটা screen touch android.মনের গভির থেকে বেরিয়ে আসা একমুখ হাঁসি।কতবার মনে মনে কামনা করেছে সে এই জিনিসটার জন্য কিন্তু কখোন বাবার সামনে বলতে পারেনি।মেঘ না চাইতে বৃষ্টির মতো আনন্দের বন্যা বইছে এখন সুকুর মনে।
"দেখ সুকু smart phone নিলেই smart হওয়া যায় না,আর আসল smart ব্যাক্তিত্তের জন্য smart phone এর কোন ভূমিকা নেই"।বাবার কথাগুলো মন দিয়ে শুনলেও সব মাথার ওপর দিয়ে বেরিয়ে গেল তার।
কলেজের প্রথম দিন বেশ কেটেছে সুকুর।চারিদিকে লোকজনের ভিড়ে সব খারাপ কিছু আড়াল হয়ে গেছে।
বাড়ি থেকে কলেজের distance টা স্কুলের থেকে বেশি।তাই বাবা সুকুকে কলেজ ছেড়ে দোকান খুলতে দেরি হয় ।তাছাড়াও সুকু এখন বড় হয়েছে নতুন নতুন কত বন্ধু বান্ধব হয়েছে ওর।ওর বন্ধুমহলে এই ব্যেপারটা যে ভালো যায়গা পায়নি তা সে এখন বুঝতে পারে।তাই এখন বাসেই যাতায়াত করে সুকু।এর আগে এত খোলামেলা পরিবেশ সে কখোন পায়নি,যদিও এটা নিয়ে তার কোন অভিযোগ নেই।অল্পে খুশি হতে শিখেছে সে বাবার কাছ থেকে।
একা একা রাস্তায় বেরোতে একটু ভয়ও লাগে আবার মজাও লাগে তার। নিযস্বতার আবেগলাগানো স্বাধীনতার প্রতাকা উড়িয়ে যাওয়া সুকু আজ জীবনের কাছে খুব great fool.
সামনেই কলেজের নবীন বরন,ওকে perform করতে হবে অনুষ্ঠানে।গ্রীষ্মের শেষ বর্ষার শুরুরতে আজ একটু মেজমেজে weather.সকাল থেকে মেঘ করে আছে,দু-একবার রাস্তা ভেজানো বৃষ্টিও হয়েছে।
কলেজ বেরোবে সুকু।
বাবা মা এবার first time আমি কলেজে perform করছি,তোমরা না এলে কিন্তু আমি স্টেজেই উঠব না" সুকু খেতে খেতে বলল বাবা মাকে। বাবা মুচকি হেঁসে বলল -- "আমিতো যাবই সুকু ,তোর মা কে জিগ্গেস কর দেখ তোর মায়ের গৃহকোন তোর কলেজ পর্যন্ত পৌছোবে কিনা" বলেই বাবা আর মেয়ে হাঁসতে শুরু করল।
রিহারসেল চলছে ফাইনাল স্টেজ রিহারসেল করছে সুকু।এরই মধ্যে দু চারটে চোখ যেন তার অস্বস্তি জাগাচ্ছে মাঝে মাঝে।এই সব কিছু এড়িয়ে সে পারফর্ম করছে একটা রবীন্দ্র নৃত্ত। নাচটা সে profetional দের কাছ থেকে শেকেনি , যতটা শিকেছে সবই মায়ের কাছ থেকে।রিহারসেল শেষ করতে করতে প্রায় ছ-টা । বাইরে অল্প অল্প বৃষ্টি পড়ছে।
"ইস্ কত দেরি হয়ে গেল,এবার যাব কি করে,বাবাকে তো বলে দিলাম বন্ধুদের সঙ্গে যাব কিন্তু ওরা তো সব উলটো দিকে যাবে । যাই হোক চলে যাইতো বাসে উঠে তাড়াতাড়ি বাড়ি পৌছে যাব" মনে মনে নিযেই বিড় বিড় করতে করতে কলেজের গেট থেকে বেরিয়ে হাঁটতে শুরু করেছে সুকু।কলেজ থেকে বাসস্টেন্ড প্রায় পাঁচ মিনিটের হাঁটা পথ।থমথমে আবোহাওয়া আর একঘেঁঙে বৃষ্টিতে প্রকৃতি যেন মুখ ভার করে আছে।সন্ধের পর রাস্তাটা একেবারে ফাঁকা হয়ে যায় ,গা ছম্ ছম্ করছে সুকুর।দু-মিনিটের হাঁটা পথ পেরোতে না পেরোতেই সুকুর বাম কাঁধে যেন ঠান্ডা হাতের স্পর্শ । চিৎকার করে লাফিয়ে উঠল সুকু।পেছন ঘুরে চারটে অজানা লোককে দেখে চমকে যায় সুকু। চারজনেরই লোলুপ দৃষ্টি ওর ওপর।ভয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে তার।চার জনের একজন বলল -- "সুন্দরি অনেকতো নাচানাচি হল,এবার আমাদের সঙ্গেও এবার এস একটু নাচিয়ে দেখি" চারজনের অট্টহাঁসি দানব দৃষ্টিতে এগিয়ে আসছে ওর দিকে। সুকু পালাবার চেষ্টা করতেই ওরা দৌড়ে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে তুলে নিয়ে চলল কলেজের পেছন দিকে পরিতক্ত কলেজ বিল্ডিংএর দিকে।হাত পা ছুঁড়ে ,অাঁচড়ে- কামড়ে ,চুলেরমুঠি ছিঁড়ে বাঁচার চেষ্টা করছে সুকু।শয়তানের কঠোর আঘাতে আজ কোন ধ্বংষের পথে এগিয়ে চলেছে এই কলেজে পড়া মেয়েটা।জানোয়ারগুলো ওকে নইয়ে গিয়ে ফেলল পুরোনো বিল্ডিংএর একটা ফাঁকা ঘরে।সুকু তখনও হাত জোড় করে পায়ে ধরে কত অনুরোধ কাকুতি মিনত করছে।শয়তানের চোরাবালিতে এসে পড়েছে সে ,বাঁচার আর কোন আশা নেই।গ্রহন লেগেছে গ্রহন রাতের অন্ধকারের প্রতিটি মুহুর্ত এই গ্রহনকে গাঢ় থেকে আরো গাঢ় করছে। চারটে নরপশুর অকথ্য অত্যাচারে তিলে তিলে শেষ হল সুকন্যা।থর্ থর্ করে কাঁপতে থাকা উলঙ্গ দেহটা আস্তে আস্তে মূর্ছে নিশ্চুপ হয়ে গেল।
ওদিকে সারাত মেয়ে বাড়িতে না ফেরায় সুকুর বাবা মা চিন্তায় উৎকন্ঠায় অস্থির হয়ে কান্নাকাটি শুরু করেছে।সকাল হতেই পুলিশ নিয়ে চিরুনি তল্লাশি করে উদ্ধার করে আধমরা ,বিদ্ধস্ত ,রক্তাক্ত দেহটা যার নাম সুকণ্যা।একদিন পরে যে মেয়েটার বাবা মা কে সামনে বসিয়ে রবীন্দ্র নৃত্ত পরিবেশন করার কথা সে এখন হাসপাতালে -পরিচয় ধর্ষিতা।কত লাইটের ফ্ল্যাস্,ক্যামেরা,রিপোর্টার,কত প্রশ্ন একটারও উত্তর দেওয়ার মত অবস্থায় আজ আর নেই এই 17+ এর কলেজে পড়া মেয়েটার।মা বিছানা নিয়েছে ।বাবার আদরের মেয়েটা আজ ধর্ষিতা।জীবনের এই কঠিন বরন কি ভীষন যন্ত্রনায় perform করছে মেয়েটা।জীবনের এই চরম পরিনতিতে শয়তানরা হয়তো জলসা করছে।
আজ সুকু হাসপাতাল থেকে বাড়ি যাবে।এখন সুকুর মাও আগের থেকে সুস্থ।বাড়ির রাস্তায় যে কখোন বাবার সাইকেল ছাড়া আর কোন গাড়ি কল্পনা করতে পারেনি আজ সে অ্যাম্বুল্যেন্সে।সাইরেন শুনে পাড়ার আশেপাশের লোকেরা জড় হয় গাড়ির চারপাশে।কতটা সান্তনা আর সহানুভুতি ছিল জানি না তবে ধ্বংষের কফিনের শেষ পেরেকটা হয়তো তাদেরই ছিল।
"ধিঙ্গি মেয়ে চারিদিকে এলো হয়ে ঘুরে বেড়ালে তো শেয়াল কুকুরে ছিঁড়ে খাবেই" বাড়ির দরজার সামনে একগাদা ভিড়ের মধ্য থেকে উঠে আসা এই কটুক্তিগুলো সুকুর বাবার বুক চিরে ফাল্ ফাল্ করে দেয়।সুকু নির্বাক সেই দিনের পর থেকে একটাও কথা বলেনি সে।কেবল তাকিয়ে দেখে গেছে তার চরম পরিনতি।যৌবনের তিলোত্তমা সুকন্যা আজ তার একটাই পরিচয় 'ধর্ষিতা'।কত বিখ্যাত এখন সে, টভি,খবরের কাগজ,সোস্যাল মিডিয়া সব জায়গায় সে এখন top rank এ।কত লোক প্রতিদিন কত কত সহানুভুতির বার্তা আনে, কার্ড পাঠায়,ফুল দেয়,ম্যেগাজিনের ইন্টারভিউ এর জন্য আসে।
"জীবনের এই চরম পরিনতিতে কত বিখ্যাত এখন সে 'সুকন্যা সৈনিক' নামপাল্টে এখন 'ধর্ষিতা সুকন্যা' তাকে এত যশ এনে দিয়েছে" মনে মনে ভাবে সুকু। চারিদিকে পুলিশ তল্যাসি করেও ধর্ষকদের টিকিটিও উদ্ধার হয়নি কিন্তু সুকুর প্রতিদিনের কর্মকান্ড সবার নখদর্পনে কি অদ্ভুদ সমাজ আমাদের।
প্রতিদিনের নরকযন্ত্রনায় বাইরের খতটা যতখানি ভালো হয়েছে ,তার থেকে হাজার গুন গভীর হয়েছে ভেতরের যন্ত্রনআ।সুকুর বাবা এখন বাড়িতেই থাকে। সারাদিন বিভিন্ন কথায়, গল্পে আর ঐ ছাদের গোলাপ গাছটা দিয়ে ভোলাবার চেষ্টা করে।গোলাপ গাছটায় পাতা গজইয়েছে দু একটা , একটা কুঁড়িও ফুটেছে ডালে।ফুলটা পর পর আকারে বড় আরো বড় সুন্দর পরিপূর্না তারপর শেষ।একটার পর একটা পাঁপড়ি খসতে খসতে শুধু পড়ে রইল মাঝের দন্ডটা। সেটাও একদিন সুকিয়ে ঝরে নিঃশেষ।
খাটের ওপর রাখা লাল সাদা ঢাকাইটা মা বের করেছে আলমারি থেকে।হ্যাঁ এটাইতো পরার কথা ছিল সেদিন।কত লম্বা শাড়িটা। যে রাতটা সুকুর সর্বনাশ দেখেছে শাড়ির দৈর্ঘ্যটা ঐ রাতের গভীরতা মুছে ফেলবে আজ।কত নীবিড় সপ্ন ছিল তার চোখে সব আজ শেষ করে দিলে কেমন হয়।বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে ভাবছে সুকু।সবকিছু ভাবতে ভাবতে চোখের পাতাটা আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে সব আলো নিভে গেল।
লোকজন ,কান্নাকটি,ভিড় সব চলল কয়েকদিন।
"মা গো আমি এখানেই আছি" বলএ উঠল সে।এখন সে মুক্ত,জীবনের সব বিতর্ক তাকে আর ছুতে পারে না।এখন সে মা বাবার খেয়াল রাখে, নাচ practis করে বাবা মায়ের বাধ্য মেয়ে।তার মুক্ত আকাশটা আজ অন্ধকারের কালো রাতকে ছাপিয়ে উঠেছে।তারপর একদিন হটাৎ করে শরীর খারাপ।বাবা আইনি কাজে বাড়ির বাইরে ,আসতে তখনও অনেক বাকি।বিছানা ছেড়ে উঠতে পারছেনা সুকুর মা।সন্ধ্যেবেলা নিজেই বেরিয়ে পড়ল সুকু ওষুধ কেনার জন্য।বর্ষাকাল, সন্ধ্যের আকাশের কালো মেঘ আর বজ্র বিদ্যুৎের ঝলকে প্রকৃতি যেন নরকশয্যায় সজ্জিত হয়েছে।বাড়ি থেকে গলির মোড় দশ মিনিটের হাঁটা পথ।হেঁটেই যাচ্ছে সুকু।অনেকদিন পর বাড়ি থেকে বেরিয়েছে সে।চার পাঁচ মিনিট যাওয়ার পর সেই চার নরপশু ঝাঁপিয়ে পড়ে ওকে তুলে নিয়ে গেল পাশের একটা পোড় বাড়িতে।আগের বারের মত এবার সুকু আর ভয়ে চিৎকার করল না।ধ্বংষের তান্ডবের পুনরাবৃত্তির সুচনা দেখছে সে।ওরা হিংস্র পায়ে এগিয়ে আসতে সুকু শুধু একটাই কথা বলল -"তোরাকি জানতে পারিসনি আমার suicide এর খবরটা"।
হ্যাঁ সুকু ওরফে সুকন্যা আজ আর বেঁচে নেই।সেদিন বিছানায় ভাবতে ভাবতে ঐ সাদা লাল ঢাকাই শাড়িটা দিয়েই গলায় দড়ি দিয়ে মারা যায় সুকন্যার দেহটা ।
তবুও থেকে গেছে সে এই ইহলোকে,কোন বিচার পাওয়ার আশায় নয় কারন তার ক্ষতির বিচার করার মত কেউ হয়ত পৃথিবীতেই নেই ।
এরকম কত লক্ষ লক্ষ সুকন্যা প্রতিদিন জন্মায় আর ধ্বংষ হয়।কেউ তাদের মনেও রাখে না।এদের স্মৃতিকটা ঐ পুলিশ ফাইল আর খবরের কাগজে বন্দি থেকে উই পোকার খাবার যোগায়।কেজানে ওটা তার জীবনের হার ছিল না জিত,তবে এই হার জিতের উর্দ্ধে উঠে প্রতিটি সুকন্যার হাহাকার হয়তো আমরা শুনতে পাই না।
তাই প্রতিটি সুকন্যা তোমাদের জন্য--- এ সমাজ -দেশ-পৃথিবী-ব্রহ্মান্ড সব ছাড়িয়ে এগিয়ে যাও ,দুরে আরো দুরে যেখানে তোমরা সত্যিকারের তিলোত্তমা সুকন্যা ।
-------------সমাপ্ত----------------
0 comments
Add your comment here
Use the following form to leave your comment on this prose
Statistics
Number of VISITORS | 28127 |
Number of REGISTERED USERS | 4956 |
Number of Writers | 2121 |
Total Number of Poems | 3 |
Total Number of Prose | 17 |
Search
Writers’ list
" সুদীপ্ত মণ্ডল (SUDIPTA MONDAL) "
স্বরূপ মুখার্জ্জী (Swarup Mukherjee)
Bhaswati Banerjee Roychowdhury
Dr. Pinki Purkayastha Chandrani
Dr. Satyadarshi Roy, A Homoeopathy Consultant
KOUSHIKA CHAKRABORTY MUKHERJEE
Paromita Raha Halder ( Bijoya)
Paromita Raha Halder ( Bijoya)
Prithwish Datta (পৃথ্বীশ দত্ত)
Romi Roy Chowdhury Chakraborty
SHARADINDU CHAKRABORTY শরদিন্দু চক্রবর্তী
Sonali Bhattacharyya Mukherjee
subarnarekha dhar (chatterjee)
Subhasree Bhattacharjee (শুভশ্রী ভট্টাচার্য্য)
SUMANTA BHOWMICK - সুমন্ত ভৌমিক
প্রসেনজীত কর মালাকার (রাতের আঁধার)
শাহীনূর মুস্তাফিজ(বিপ্লবী কবি)