পুরুষ
থার্ড ইয়ারে পড়ার সময়ই বাড়ির লোকজন এন.আর.আই. পাত্রের সাথে বিয়ে ঠিক করে ফেলে রুমেলার। মেধাবী ছাত্রীর তখন চিঠিতে কোর্টশিপ চলছে... চিঠি এলে অংশ বিশেষ পড়ে শোনাত। আশির দশকে যোগাযোগ ব্যবস্থা যে হাতের মুঠোয় ছিল না! পরীক্ষার পর বিয়ে করে রুমেলা পাড়ি দিল বিদেশে! আমরা পড়ে রইলাম আরও পড়াশোনা করে নিজেদের একটা হিল্লে হবার অপেক্ষায়!
কালে কালে সবাই যে যার মত করে থিতু হয়েছে। ইদানিং সোশ্যাল সাইটের মাধ্যমে পুরানো বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ – গেট টুগেদার! সবার খোঁজ খবর নিতে গিয়ে বেড়িয়ে এল রুমেলা! ও নাকি বিয়ের পাঁচ বছরের মাথায় স্টেটস থেকে পালিয়ে এসেছে! ওর হিরের টুকরো পতি দেবতা ওকে পরিচারিকার মত রাখতো – অন্য মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিল গুণধরটির। সংসারের যাবতীয় কাজ কর্ম রুমেলাকে সামলাতে হত – একটু ভুল ত্রুটি হলেই বেদম মার! বাপের বাড়িতে লোক লজ্জার ভয়ে আর সংকোচে কিছু জানায়নি!
শুধু কি তাই! রুমেলার ঘরে লোক ঢুকিয়ে ব্যবসা ফেঁদেছিল! পাসপোর্ট সার্টিফিকেট সব গুণধরটি আটকে রেখেছিল – আর টাকা কড়ির তো প্রশ্নই নেই! বাড়ির থেকে বেরুবার কোনও পথ নেই- আর বরাবরের আদরের মেয়ে যাকে নাকি তুলোয় মুড়ে রেখেছিল ওর বাবা মা- তার প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে উঠছিল ক্রমশ!
তৃষা আমাদের বন্ধু সে আমাদের বলছিল রুমেলার কথা! জিজ্ঞাসা করলাম সবাই – তুই এত কিছু জানলি কি করে? মুচকি হেসে বলল – রুমেলা যে এখন আমার বৌদি!
আমরা সবাই চেপে ধরতে বলল, স্টেটসেই সেবার অফিসের কাজে গিয়ে রুমেলা হঠাৎ দেখা হয় দাদার! সব জেনে দাদা সেই গুণধরটিকে জেলে পাঠাবার বন্দোবস্ত করে আর সাথে রুমেলাকে নিয়ে ফেরে! একটা বেসরকারি স্কুলে পড়ায়! ডিভোর্সের মামলা নিস্পত্তি হতে হতে মাসীমা – মেসোমশায় গত হয়েছেন। বছর তিনেক আগে দাদা ওকে বিয়ে করেছে! ছেলে পুলে হবার আর কোনও চান্স নেই! অনাথ দুটি মেয়েকে দত্তক নিয়েছে! বেশ আছে ওরা!
আমরা যেন সবাই হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম! আর তৃষার দাদাকে মনে মনে অনেক প্রণাম জানালাম! দু জনই পুরুষ ! একজন শুধু পুরুষ আর অন্যজন কাপুরুষ!
স্বাতী বিশ্বাস * ১.৫.১৫*